নতুন আইপিও’র মাধ্যমে আসা কোম্পানির শেয়ার দর ফেসভ্যালুর নিচে নেমে যায়। অন্যদিকে কলকব্জা মেরুদন্ডহীন কোম্পানির শেয়ার দর ২৫ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় উঠে যায়। সত্যিই অদ্ভূত এক শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা ব্যবসা করছে। এটাকে কখনোই শেয়ারবাজার বলা যায় না। সাবেক অর্থমন্ত্রী কম দু:খে এটাকে জুয়ার বাজার বলেননি। কারণ এই মার্কেটে একদিন সূচক কমলে পোর্টফোলিও’র যে খারাপ অবস্থা হয় চারদিন বাড়লেও সে ক্ষতি পুষিয়ে উঠা যায় না।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আগের যেকোন সময়ের কমিশনের চেয়ে ভালো কাজ করছে এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু দিন শেষে একজন বিনিয়োগকারী তার পোর্টফোলিও’র চিত্র যখন নেগেটিভ দেখে তখন ভালো কাজ করলেও উল্টো সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয়। এ মার্কেটে সব বিনিয়োগকারী যে লস করছে বিষয়টা তাও নয়। যেসব বিনিয়োগকারী নিয়মিত লাভ করছে এদের সংখ্যা খুবই কম এবং একটি নির্দিষ্ট চক্রের কেউ আত্মীয় কিংবা করপোরেট ভাই-ব্রাদার। শেয়ার ব্যবসা করে কেউ লাভ করবে কেউ লস করবে সেটাই নিয়ম। আর এজন্য রেগুলেটরি বডিকেও দোষারোপ করা অনুচিত। কিন্তু একদম খোলা চোখেই যখন ধরা পড়ে মার্কেট অস্বাভাবিক আচরণ করছে তখন চুপ করে থাকলে বিএসইসির সমালোচনা শোনাটাই স্বাভাবিক।
আগের কমিশনের আমলে কারসাজি হলেও তা ছিল অনেকটা গোপনে। কিন্তু বর্তমানে বলা চলে একদম খোলা মেলা ভাবেই গেম্বলিং হচ্ছে। নামেমাত্র একজনকে টার্গেট করে জরিমানা করে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের ঠিকই ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এমনও দেখা যাচ্ছে, অন্যান্য সেক্টরের কোম্পানির মালিকপক্ষ নিজের কোম্পানির টাকা শেয়ার ব্যবসায় বিনিয়োগ করছে। আবার ট্রেকের লাইসেন্স নিয়ে, কোম্পানি অধিগ্রহণের নাম দিয়ে বেনামে শেয়ারবাজার থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অর্থাৎ “সব মাছ গু খায়, ঘ্যাইরা মাছের নাম হয়” অবস্থা।
কিছু বিনিয়োগকারী বর্তমান মার্কেটে সুবিধা করতে পারলেও মুষ্টিমেয় বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিও অবস্থা নাজুক পর্যায়ে রয়েছে। নতুন বিনিয়োগ দিয়ে লোকসানের শেয়ার অ্যাডজাস্ট করার চেষ্টা করা হলেও সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ একদিন পতনে যে পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে তা কভার করতে কয়েকদিন উত্থানের প্রয়োজন হয়। আর টানা কয়েকদিন উত্থানে থেকে যে পরিমাণ লোকসান কমে পরবর্তী কারেকশনের সময় সেই লোকসানের পাল্লা আরো ভারি হয়। নির্দিষ্ট কিছু শেয়ার ছাড়া বেশিরভাগ শেয়ারই এক প্রকার থমকে রয়েছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসও কোন কাজে আসছে না। তবুও মন্দের ভালো হিসেবে বাজার এক্কেবারে পতনমুখী নয়। দু’তিন দিন পতন হলেও আবার ঘুরে দাঁড়ায়। তবে গেল বছর বাজার যে গতিময় আচরণ করেছিল সেটি আবার ফিরে আসলে ছন্দ ফিরে আসবে। তাই ছন্দে ফিরুক পুঁজিবাজার, ছন্দে থাকুক সব বিনিয়োগকারী।
ডেইলি শেয়ারবাজার ডটকম/মাজ.নি