বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে কারিগরি দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতায় এগিয়ে চলার তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বিশ্বে টিকে থাকতে হলে তরুণ প্রজন্মকে এখনই কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য দরকার রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা ও জ্ঞানভিত্তিক গুণগত কারিগরি শিক্ষার প্রচার-প্রচারণা, যার আলো তাদের অন্তরকে আলোকিত করবে, যা সম্ভাবনা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি এবং আত্মবিশ্বাসী কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। কারিগরি জ্ঞানার্জনের ফলে তরুণরা নীতি-নৈতিকতা, দক্ষতা, কর্মক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে নিজেকে কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কর্মমুখী শিক্ষা যান্ত্রিক শিক্ষা নয়, জীবনমুখী শিক্ষার পরিমণ্ডলেই তার অবস্থান। পরিপূর্ণ ও সামগ্রিক জীবনবোধের আলোয় বিচার করা হয় কর্মমুখী শিক্ষার ভূমিকাকে। কর্মমুখী শিক্ষা নিঃসন্দেহে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক জনশক্তি সৃষ্টি করতে চায়, কিন্তু তার মানবিক গুণাবলির বিকাশের দিকটিও উপেক্ষিত থাকতে পারে না। এ থেকে কর্মমুখী শিক্ষার লক্ষ্য ত্রিমুখী:
(ক) জ্ঞানজিজ্ঞাসা সৃষ্টি: জ্ঞানবিজ্ঞান অর্জনের সঙ্গে শিক্ষার্থীর পরিচয় ঘটানো, অজানাকে জানার আগ্রহ সৃষ্টি এবং সুপ্ত গুণাবলির বিকাশ ঘটানো।
(খ) মূল্যবোধ সৃষ্টি: শিক্ষার্থীকে নৈতিক, সামাজিক ধর্মীয় ও মানবিক সাংস্কৃতিক মুল্যবোধে উজ্জীবিত করা এবং গণতন্ত্রমনা, যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।
(গ) কাজে উৎসাহ সৃষ্টি: কর্মমুখী, জীবনসম্পৃক্ত, বৃত্তিমূলক ও উপার্জনমনস্ক জনশক্তি গড়ে তোলা।
আমাদের শিক্ষানীতি-নির্ধারক ও সরকারকে এই তিনটি লক্ষ্য অর্জনের ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে, তাহলেই অতিরিক্ত জনশক্তি সম্পদে রূপান্তর হবে।
বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার ও মানোন্নয়নকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এরই মধ্যে সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)’ অর্জনকে সামনে রেখে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষার্থী ভর্তির হার ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশে উন্নীত করার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন নতুন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, ইন্ডাস্ট্রি-ইনস্টিটিউট লিংকেজ স্থাপন, দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণ, যুগোপযোগী কারিকুলাম উন্নয়ন প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এজন্য সরকার প্রতি বছর কারিগরি শিক্ষার বাজেট প্রতিটি অর্থবছরে বৃদ্ধি করেই চলছে।
কারিগরি শিক্ষা: এই শিল্পবিপ্লবের যুগে উচ্চশিক্ষিতরাই বেশি বেকার থাকে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রিধারীদের মধ্যে বেকার মাত্র ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ, অন্যদিকে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা গ্রহণকারীদের মধ্যে কেউ বেকার থাকে না। অর্থাৎ কর্মসংস্থানের হার শতভাগ। কারিগরি শিক্ষাকে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে জনপ্রিয় করে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে উৎপাদনমুখী মানবসম্পদে রূপান্তর করাই মূল লক্ষ্য।
শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার
হেড অব অপারেশন ও সহযোগী অধ্যাপক
ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি, চট্টগ্রাম
mshahnewazmazumder@gmail.com
ডেইলি শেয়ারবাজার ডটকম/এম এম