শনিবার, ৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

spot_img
spot_img
Homeঅনুসন্ধানী প্রতিবেদনকি হচ্ছে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালে: বিএসইসি’র তদন্ত দাবি

কি হচ্ছে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালে: বিএসইসি’র তদন্ত দাবি

ডেইলি শেয়ারবাজার রিপোর্ট: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস লিমিটেডের আর্থিক প্রতিবেদনে গোঁজামিলের অভিযোগ উঠেছে। বিপুল পরিমাণ বাকিতে পণ্য বিক্রি, পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে ঋণের পরিমাণ বেশি হওয়া, ব্যয় বেশি দেখিয়ে উৎপাদন কম দেখানো ইত্যাদি কারণে কোম্পানিটির ভবিষ্যত নিয়ে আশঙ্কা করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাই বিনিয়োগকারী তথা পুঁজিবাজারের স্বার্থে কোম্পানিটিকে বাঁচানোর জন্য তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে মনে করেন তারা।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল ৩০ জুন ২০২২ সমাপ্ত অর্থবছরে টার্নওভার দেখিয়েছে ৪৬ কোটি ২৯ লাখ ৭২ হাজার ৪২৫ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে টার্নওভার ছিল ৫৭ কোটি ৯১ লাখ ৪৮ হাজার ১১১ টাকা। অর্থাৎ টার্নওভার গত অর্থবছরের তুলনায় ২০ শতাংশ কমেছে। টার্নওভার কমলেও অ্যাকাউন্টস রিসিভেবল বেড়েছে ২৬ কোটি ৮০ লাখ ৩৩ হাজার ৫৯৭ টাকা থেকে ২৭ কোটি ১৫ লাখ ১৩ হাজার ৩৪০ টাকা। অর্থাৎ টার্নওভারের ২৭% থেকে ৩১% পর্যন্ত বাড়িয়ে বাকিতে পণ্য বিক্রি করে যাচ্ছে। এভাবে কোম্পানি এতো বেশি পরিমাণ বাকিতে বিক্রি করে তীব্র তারল্য সংকটে ভুগছে। এতে কোম্পানিটির ব্যবসা স্থবির হয়ে পড়ছে।

এদিকে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের ২৫নং নোটে গ্যাস এক্সপেন্স দেখানো হয়েছে ১৬ কোটি ৯১ লাখ ৩১ হাজার ১০৭ টাকা। গত অর্থবছরের গ্যাস এক্সপেন্স দেখানো হয়েছিল ১ কোটি ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৫ টাকা। এতো বিপুল পরিমাণ গ্যাস ব্যয় দেখানোর পরেও কোম্পানির উৎপাদন কমেছে। কোম্পানির উৎপাদন গত অর্থবছরে যেখানে ২ কোটি ১১ লাখ ৫০ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন ছিল সেখানে আলোচিত বছরে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৫ লাখ ৭৫ হাজার ৪৬৬ মেট্রিক টন। গ্যাসের ব্যয় এতো অতিরিক্ত হওয়ার পরে উৎপাদন কম দেখানো নানা সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যে আরো জানা যায়, আলোচিত বছরে কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ২ কোটি ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ৭ কোটি ৯৬ লাখ ৪৭ হাজার ৮৫৬ টাকায় উন্নীত হয়েছে। অন্যদিকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ ৪৪ কোটি ২৩ লাখ ৬২ হাজার ৯৪০ টাকা থেকে ৬৬ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৩৯ টাকায় উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় আলোচিত বছরে ঋণের পরিমাণ ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থবছরের যেখানে মোট ঋণ ছিল ৪৭ কোটি ১৭ লাখ ২৩ হাজার ৫০ টাকা; সেখানে এ বছর ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৪ কোটি ৭০ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯৪ টাকা। এক্ষেত্রে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ২৭ কোটি ৫৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫৪৪ টাকা। অর্থাৎ কোম্পানির ঋণ তার পরিশোধিত মূলধনকে (৭২ কোটি টাকা) ছাড়িয়ে গেছে। ঋণের পরিমাণ বেড়েছে কিন্তু প্রডাকশন না বেড়ে বরং উল্টো কমেছে। এতে কোম্পানি সামনে অস্তিত্ব সংকটে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

উল্লেখিত বিষয় নিয়ে গেল কয়েকদিন ধরে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালসের কোম্পানি সচিব খন্দকার আহাদুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি এসব বিষয়ে কোন মন্তব্য না করে এড়িয়ে চলছেন।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর আগে তালিকাভুক্ত যত কোম্পানি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে সবগুলোই অর্থ লুটপাটের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালসের ভেতরে অর্থ লুটপাট হচ্ছে কিনা বা তলাবিহীন ঝুঁড়ি হয়ে গেছে কিনা সে বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনতিবিলম্বে তদন্ত করা দরকার বলে মনে করেন তারা।

 

ডেইলি শেয়ারবাজার ডটকম/মু.

RELATED ARTICLES
spot_img

Most Popular

Recent Comments