প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) আবেদনে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগসীমা রেখে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। আবার গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের আইপিওতে সাবস্ক্রিপশন যেন চাহিদার তুলনায় কম না হয় সেজন্য একাধিক বাড়তি সুবিধা দিয়ে সেই আইনের সংশোধন এনে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ইফাদ অটোসের ৩০০ কোটি টাকা বন্ড ইস্যুর ক্ষেত্রেও আইন সংশোধন করে কোম্পানিকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের মতই ঢাক-ডোল পিটিয়ে ইউনিয়ন ব্যাংক, সাউথ বাংলা ব্যাংক, এনার্জি পাওয়ার, বারাকা পতেঙ্গা, রবি’র আইপিও বাজারে আনা হয়েছিল। এসব কোম্পানি বাজার থেকে বের করে নিয়েছে শত শত কোটি টাকা। অথচ এরা এখন শেয়ারবাজার ও বিনিয়োগকারীদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের আইপিওতে বিশেষ সুবিধা হিসেবে ১০,০০০ টাকা বা এর গুণিতক সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত আইপিও আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।এছাড়া প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের জন্য আইপিও ২৫ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রবাসিদের আবেদনে যদি আন্ডার সাবস্ক্রাইব হয়, তাহলে বিদেশিদের কোটা কমিয়ে তা দেশিয় সাধারণ বিনিয়োগকালীদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে ৪২৫ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। এতো বিশেষ সুবিধা, বিশেষ ছাড়, পরিবর্তন, সংযোজন, সংশোধন আইন নিয়ে এমন ছেলে খেলা আর কতবার করে পুঁজিবাজার তথা বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে তা বাজারের অভিভাবকই ভালো বলতে পারবে।
তারল্য অভাবে ভুগতে থাকা পুঁজিবাজার থেকে একের পর বস্তাপঁচা আইপিও দিয়ে হাজার কোটি টাকা বের করে নেয়া হচ্ছে। অথচ বাজার ভাল করার দিকে কারো নজর নেই বললেই চলে।
কেন একটা কোম্পানিকে বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলতে বিশেষ ছাড় দেয়া হচ্ছে। আইপিও আবেদনের আইন যেমন আছে তেমন রাখতে সমস্যাই বা কোথায় সে জবাবদিহিতা কারো মধ্যে আছে বলে মনে হয় না।
একটা কোম্পানি যদি তার শক্তিবলে বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করতে না পারে বুঝে নিতে হবে সেটি আইপিওতে আসার উপযুক্ত নয়। এমন অবস্থায় বিশেষ ছাড় দিয়ে আইপিওতে আসতে দিলে কি হতে পারে তা রবি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
এই রবি’র নিচে চাপা পরে আছে শত শত বিনিয়োগকারীদের পুঁজি। এতো বিপুল পরিমাণ অর্থ বাজার থেকে নিয়ে কোম্পানিটি ইপিএস মাইনাস দেখিয়েছে।
এইসব বিশেষ ছাড় পাওয়া আইপিও দিয়ে কখনো বাজার ভালো করা যায় না। আর কোম্পানিকে সুবিধা দিয়ে পুঁজিবাজার তথা বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মুখে ফেলে দেওয়ারও কোন মানে হয় না। বর্তমান কমিশনের আমলে যেসব আইপিও অনুমোদন দিয়েছে তার বেশিরভাগই বস্তাপঁচা কোম্পানি। একমি পেস্টিসাইডসের উৎপাদনের নামে ফ্যাক্টরীতে যে কি চলছে তা সরাসরি কেউ না গেলে দেখতে পারবে না। ডোমিনেজ স্টীল, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেনের বর্তমান কি অবস্থা, আদৌ উৎপাদন আছে কিনা তা কেউ যাচাই করছে না। পিকে হালদারের বদনাম ঘুচাতে নাম পরিবর্তন করে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক চলছে সে তথ্য নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্ট অভিভাবক জানেন।
এভাবেই একটি বিশেষ শ্রেণীকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দিতে যা করা হচ্ছে তার হিসেবও একদিন দিতে হবে। কারণ ১০ বছর আগে কারসাজি করা ব্যক্তি যেমন ছাড় পায়নি তেমনি শুধু খোলসে পড়ে থাকা বাজে কোম্পানি পুঁজিবাজারে এনে সংশ্লিষ্ট কেউই ছাড় পাবে না।
ডেইলি শেয়ারবাজার ডটকম/মাজ./নি.