Sunday, March 23, 2025
spot_img
spot_imgspot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

দুর্যোগে চরম ঝুঁকিতে নারী

ডেইলি শেয়ারবাজার ডেস্ক: দুর্যোগে নারীদের দুর্ভোগ থাকে সবচেয়ে চরমে। জলবায়ুর পরিবর্তনগত কারণে এশিয়া মহাদেশের যে কয়েকটি দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে, বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো প্রকৃতিতে নেমে আসে একক সময় একেক নামে ও রূপে। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরা, দাবদাহ কিংবা নদীভাঙনের মতো দুর্যোগগুলো আসে কেবল দেশের প্রান্তিক মানুষের ওপরেই। দুর্যোগের কারণে কখনো পাহাড়ি ঢল নামে, দুই কূল ভাসিয়ে নিয়ে যায়, কখনো বা নদীভাঙনের ভয়াবহ শিকার হয়ে জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। প্রকৃতির এ লীলাখেলা যেন বছরের পর বছর ধরে চলতেই থাকে।

ফলে দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলের মানুষগুলোর অভাব যেন পিছু ছাড়ে না। তাদের ঘর-সংসার-উঠান, গবাদিপশু-আবাদি জমি-ফসল সবকিছুই ভাসিয়ে নিয়ে যায়। চলতে থাকে তাদের ভাঙ্গা-গড়ার খেলা। দুর্যোগের কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে গেলেও সেখানে নারীকে পড়তে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগে।

এ সময় বাড়ির পুরুষ সদস্যরা কখনো কাজের সন্ধানে, কখনো দুর্যোগ থেকে বাঁচতে অন্যত্র চলে যান। কিন্তু পরিবারের নারী সদস্যরা তার সন্তান, বয়োজ্যেষ্ঠদের দেখভাল করার জন্য পরিবারে দুর্বিসহ কষ্টে পড়ে যান। খাবার জোগাড় করা, সুপেয় পানি আনা, জ্বালানি সংগ্রহ করা, পরিবারের জন্য দুই পয়সা রোজগার করা—সবই করতে হয় নারীদের। এ সময় তারা ভুলে যান নিজে শরীর-মন-ক্ষুধা কিংবা অসুস্থতা। তাদের জীবনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় পরিবারের শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের বাঁচিয়ে রাখা, ভালো রাখা। নারীরা তাদের ভিটেমাটি ছেড়ে কোথাও যেতে চান না। সে সময় নারীরা অপেক্ষায় থাকেন পরিবারের পুরুষ সদস্যের জন্য। সেই অপেক্ষা হয়তো কখনো শেষ হয়, হয়তো হয় না।

আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফামের ‘এশিয়ায় জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতির লৈঙ্গিক দিক বা জেন্ডার ডাইমেনশন অব লস অ্যান্ড ড্যামেজ ইন এশিয়া’—বিষয়ক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সব দুর্যোগকবলিত এলাকার ৮৭ শতাংশ নারী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। ৫৪ শতাংশ নারী শারীরিক দুর্বলতা এবং ২৫ শতাংশ মাথাঘোরার মতো অসুস্থতায় ভোগে। দেশের নারীরা যে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পুরুষের চেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়, সেটি সহজেই অনুমেয়।

সে কারণেই পরিবেশের বিপর্যয় ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নারীদের ওপরই বেশি

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্যোগের কারণে ক্ষতির শিকার মানুষের মধ্যে ৪ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা নারী। গর্ভকালীন জরুরি সেবার অভাবে সন্তান প্রসবকালে অনেক নারী ও কিশোরীর মৃত্যু হয়। অনেকে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হন। অপর একটি বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, স্বাভাবিক সময়ে বিভিন্ন বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার নারীদের সংকট দুর্যোগ পরিস্থিতিতে আরো বাড়ে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মেয়েশিশুদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে বাল্যবিয়ের হারও বেড়ে যায়। বিপর্যস্ত এলাকায় নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা বেড়ে যায়। ধর্ষণ, যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হয় নারীকে। বিশেষ করে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নারী যৌন হয়রানিসহ নানা হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হন।

আন্তর্জাতিক সংস্থা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি পরিচালক ইমাম জাফর শিকদার বলেন, দুর্যোগে আমাদের গ্রামীণ নারীদের সমস্যা পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি হয়। বিশেষ করে তাদের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় পড়তে হয়। এছাড়া স্বাস্থ্যের বিষয়টা তো থাকেই। এছাড়া যদি ডায়েরিয়া হয় তাহলে তাদের জন্য সেটা আরও কষ্টের হয়। তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিও বাধাগ্রস্ত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দুর্যোগের সময় নারী ও শিশুদের আবদ্ধ অবস্থায় থাকতে হয়, এতে তাদের স্বাভাবিক জীবন বাধাগ্রস্ত হয়। দুর্যোগে নারী ও শিশুমৃত্যুর হার পুরুষের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। শুধু দুর্যোগ নয়, বিভিন্ন সামাজিক ঝুঁকি, দৈনন্দিন আপদ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিষয়গুলোতেও নারীরা ঝুঁকিতে পড়েন। জলবায়ু পরিবর্তন, বিরূপ আবহাওয়ার প্রভাবে নারী ভিন্নভাবে এবং অসমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা জ্বালানি ও জলাধারে নারীর প্রবেশাধিকার, নতুন উৎস সন্ধান, খাদ্য নিরাপত্তা, টেকসই কৃষি, জীবিকা, শিক্ষা, নিরাপদ কাজের সুযোগ ও সুন্দর জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে ঝুঁকিতে পড়েন। এছাড়া বন্যা, ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে খাবার দিয়ে নিজের খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দেন নারী। ফলস্বরূপ তারা পুষ্টিহীনতায় ভোগেন। এছাড়া পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে উপকূলীয় নারীরা নানা রোগে ভোগেন। এর মধ্যে মেয়েদের প্রজনন স্বাস্থ্যসম্পর্কিত সমস্যাও রয়েছে। কখনো পরিবারের ভার বহনে নিজেরাও কাজে যোগ দেয়। কাজ করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। দীর্ঘসময় ধরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অবস্থান করে কাজ করে। ফলে নারীরা অসুস্থ হয় পড়ে, কখনো কখনো নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যও ঝুঁকিতে পড়ে।

 

ডেইলি শেয়ারবাজার ডটকম/এম আর.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles