Thursday, April 24, 2025
spot_img
spot_imgspot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

ডিসেম্বরের মধ্যে কমে আসবে মূল্যস্ফীতি

ডেইলি শেয়ারবাজার ডেস্ক: আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার সময় দেশে মূল্যস্ফীতি উচ্চ পর্যায়ে ছিল। দুই বছরের মধ্যে সরকার তা নিয়ন্ত্রণে আনে। এক দশক মূল্যস্ফীতি ছিল ৫-৬ শতাংশ। বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও সরকারের পদক্ষেপের কারণে এখন মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব হয়েছে। এবার সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে আগামীতে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। ডিসেম্বরের মধ্যে এর প্রভাব দেখা যাবে। গতকাল শুক্রবার বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

সংবাদ সম্মেলনে ঘুরেফিরে আসে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ডলার সংকট কাটাতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকা এবং বারবার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার প্রসঙ্গ। এ ছাড়া প্রশ্ন আসে– বাড়তি করের চাপ, বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ঋণনির্ভরতা ও ব্যাংক খাতের বর্তমান দুরবস্থা নিয়ে।

আগামী বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ওএমএস, ফ্যামিলি কার্ডসহ যেসব কার্যক্রম চলছে তা অব্যাহত থাকবে। আমরা চাইলে বাজেটের আকার আরও বড় করতে পারতাম। তবে দ্রব্যমূল্যের ওপর যেন চাপ না পড়ে, সেজন্য আকার কমিয়ে রাখা হয়েছে। আশা করছি, এ বছরের শেষের দিকে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।

তিনি বলেন, ‘এখনকার মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি। কেননা, করোনা-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উন্নত দেশগুলো মূল্যস্ফীতি কমাতে গিয়ে সুদহার বাড়িয়েছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা আসা কমেছে। একই সময়ে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বেড়েছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ বেড়ে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে। তবে ডলারের দর নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ চালু এবং অফশোর ব্যাংকিং নীতিমালা সহজ করায় শিগগির ডলার সংকট কেটে যাবে। আগামী অর্থবছর শেষে রিজার্ভ বেড়ে ৩২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি কমাতে আরও কিছুদিন সংকোচনমূলক নীতি কৌশল অব্যাহত থাকবে। তবে এতে প্রবৃদ্ধি যেন খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও আমরা লক্ষ্য রাখছি। কৃষি, শিল্প, সেবা খাত যেন স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। সংকোচনমূলক নীতি সত্ত্বেও গত অর্থবছর ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আগামী অর্থবছর ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে।

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার প্রমুখ।

ব্যাংক খাতের বর্তমান অবস্থার মধ্যে ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে কোনো সমস্যা হবে কিনা– এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সব বাজেটেই সব অর্থমন্ত্রী ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। উন্নত দেশে আরও বেশি ঋণ নিয়ে থাকেন। আমাদের বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। ফলে এটা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, ‘ব্যাংকগুলো তো সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ করে। ঋণ নেওয়া না হলে তারা চলবে কী করে? অনেকেই কিছু ব্যাংক বন্ধ করার কথা বলেন। অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাই বলে ব্যাংক বন্ধ করা কোনো সমাধান না।

মূল্যস্ফীতি নিয়ে এক প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, বাজেটের আকার কমানো হয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আরও ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে। চলতি বছরের শেষের দিকে এটি কমতে শুরু করবে।

এ প্রসঙ্গে অর্থ সচিব বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে বেশ কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাজারে সরবরাহ শৃঙ্খলে ত্রুটি কাটিয়ে উঠতে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে।

আগামীতে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাজার মনিটরিং বাড়ানোর কথা জানান বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাজার মনিটরিং একটি চলমান প্রক্রিয়া। বাজেটের পর হঠাৎ নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্যের দরে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে– এমন তথ্য নেই। পণ্যের দাম বাড়ার মতো কোনো ঘোষণাও প্রস্তাবিত বাজেটে নেই। উল্টো কমানোর জন্য নিত্যপণ্যের উৎসে কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশে নামানো হয়েছে।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাচ্চাদের গুঁড়া দুধে শুল্ক কমানোসহ ১০ পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্কায়নে নিম্ন মূল্য প্রত্যাহার করা হয়েছে। ১০টি পণ্যে শুল্ক কমানোর পাশাপাশি ১৯টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার এবং ১৭২টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক কমানো হয়েছে। অন্যান্য শুল্ক যথাযথ সময়ে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা হবে।

খেলাপি ঋণ ও আর্থিক খাতের সংস্কার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, ‘ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দীর্ঘদিনে বেড়েছে। কখনও অর্থনৈতিক অবস্থা, আবার কখনও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার জন্য এটি বর্তমানে অনেক হয়ে গেছে। তবে ব্যাংকগুলো বন্ধ না করে সচল রেখেই এর সংস্কার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সরকার সচেতন। ব্যাংক খাতে সমস্যা তৈরির সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংসদ সদস্যরা এরশাদের সময় থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে আসছেন। এবার অর্থমন্ত্রী প্রথমবারের মতো শুল্ক বসিয়েছেন। এটা সাহসী পদক্ষেপ। যত দ্রুত সম্ভব এ-সংক্রান্ত আইন পরিবর্তন করা হবে।

পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহার দীর্ঘদিন কমিয়ে রাখা হলেও পুঁজিবাজার ফুলেফেঁপে খুব বেশি ভালো অবস্থায় ছিল– এমনটি নয়।’ তিনি বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন, পুঁজিবাজারের জন্য কার্যকরী উদ্যোগ হচ্ছে শুধু করহার কমিয়ে রাখা। তবে আগে বেশি কর সুবিধা দেওয়া ছিল, তার রেজাল্ট কি পাওয়া গেছে? পুঁজিবাজারে এলে সমস্যা কোথায়, সেটা কি চিহ্নিত করা হয়েছে?

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। ২০ শতাংশের নিচে যদি করপোরেট ট্যাক্স করা হয়, তাহলে রাজস্ব বাড়ানো কঠিন। ১৫ শতাংশ করপোরেট ট্যাক্স করার পর্যায়ে দেশ এখনও আসেনি।

 

ডেইলি শেয়ারবাজার ডটকম/এম আর.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles