ডেইলি শেয়ারবাজার ডেস্ক: মাদারীপুরের শিবচরের আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙন ঠেকাতে ২২২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে স্থায়ী বেড়িবাঁধ। এরই মধ্যে সাড়ে ৬ কিলোমিটারের এ বাঁধ নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৮০ শতাংশে বেশি। প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে সুবিধা পাবেন ভাঙনকবলিত পাঁচটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ। এতে এখনই যেন আনন্দে আত্মহারা নদপাড়ের বাসিন্দারা। আগামী জুন পর্যন্ত মেয়াদ থাকলেও তিন মাস আগেই পুরো কাজ শেষ হবে বলে জানায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার শিরাইল ইউনিয়নের পশ্চিম কাকৈড় গ্রামের বাসিন্দা ৬৫ বছর বয়সী মুদি দোকানি তৈয়ব আলী মাদবর। এ নদের ভাঙনে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়েছেন চার বার। এখন বাড়ির কাছে নির্মাণ হচ্ছে স্থায়ী বেড়িবাঁধ। তার চোখে-মুখে এখনই আনন্দের হাসি। কারণ অচিরেই দূর হতে যাচ্ছে তার দীর্ঘদিনের দুঃখ।
শুধু তৈয়ব আলী নন, তার মতো ইদ্রিস হাওলাদার, নিজাম মুন্সি ও রহিম মিয়ার গল্পও একই রকম। নদে ভাঙনে সব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া এসব মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার পথে।
ক্ষতিগ্রস্ত তৈয়ব আলী মাদবর বলেন, ‘চারবার নদের ভাঙনে সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। শেষমেশ একটু জায়গা কিনে বাড়ি করেছি। ভেবেছিলাম এবারও ভাঙনের কবলে পড়ব। কিন্তু বাড়ির কাছেই স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের ফলে স্বস্তি ফিরেছে।
আরেক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ইদ্রিস হাওলাদার বলেন, ‘বারবার ঘরবাড়ি নির্মাণের সামর্থ্য নেই। চারবার ভাঙনের পর ছোট একটি ঘর তৈরি করে নদের পাড়েই বসবাস করছি। কিন্তু এ স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণে নতুনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছি। সেই সঙ্গে নদের পাড় দিয়ে হাঁটাচলা করতেও সুবিধা হবে। মনে এখন আর কোনো কষ্ট নেই।
জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজটি বাস্তবায়ন করছে খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গুণগত মান ঠিক করে প্রকল্পটি দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাবার কথা জানান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি। জিওবির অর্থায়নে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবার কথা ২০২৫ সালের জুনে।
পাউবোর কর্মকর্তারা জানায়, প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে সুবিধা পাবেন বহেরতলা, শিরুয়াইল, নিখলী, দত্তপাড়া ও সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ। গত ১০ বছরে আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনে বিলীন হয়েছে শত শত ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। সেই সাথে নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। এবার বেড়িবাঁধ নির্মাণের ফলে নতুনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন এখানকার বাসিন্দারা।
খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডের প্রতিনিধি শেখ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘কাজটির গুণগত মান ঠিক রেখে বিভিন্ন শিফটে কাজ করছে কয়েকশ শ্রমিক। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবার আগেই কাজ শেষ হবে। এজন্য প্রতিনিয়ত তদারকি করা হচ্ছে।
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবু সাজ্জাদ হাসান কবির বলেন, ‘প্রকল্পটির কাজ পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে পাঁচটি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হবে। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে এখানকার বাসিন্দাদের মনে আর কোনো ভয় নেই।
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সানাউল কাদের খান বলেন, ‘নদের পাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কথা চিন্তা করেই এ প্রকল্প নেয়া হয়েছে। সরাসরি নৌবাহিনী তত্ত্বাবধানে স্থায়ীভাবে করা হচ্ছে এ বেড়িবাঁধটি, যাতে এর গুণগত মান ঠিক থাকে।
ডেইলি শেয়ারবাজার ডটকম/এম আর.