Thursday, April 24, 2025
spot_img
spot_imgspot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

মৃত পরিচালকের শেয়ার বিক্রির টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মাস্টার ফিডের এমডি: পর্ব-১

ডেইলি শেয়ারবাজার রিপোর্ট: মৃত পরিচালকের শেয়ার বিক্রি করে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠেছে পুঁজিবাজারে এসএমই মার্কেটে তালিকাভুক্ত মাস্টার ফিড এগ্রোটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কবির হোসেনের বিরুদ্ধে। গত ২৭ জুলাই এ বিষয়ে ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাউসার আল মামুনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন মৃত পরিচালকের স্ত্রী উম্মে হাবিবা ইয়াসমিন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, উম্মে হাবিবা ইয়াসমিনের সরলতার সুযোগ নিয়ে কাগজপত্রাদিতে স্বাক্ষর করিয়ে নেন মাস্টার ফিডের এমডি কবির হোসেন। আর সেসব স্বাক্ষরকৃত কাগজপত্রাদি ব্যবহার করে ভূয়া বিও অ্যাকাউন্ট ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে তার নামে ট্রান্সফারকৃত শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে আলাপকালে উম্মে হাবিবা বলেন, মাস্টার ফিডের এমডি কবির হোসেন আমাকে না জানিয়েই আমার শেয়ার বিক্রি করে টাকা উঠিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর পর আমি স্বাভাবিকভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। আর এ সুযোগে কবির হোসেন ও আমার দেবর মো. তৌহিদুল আলম আমার মৃত স্বামীর কোম্পানীর কিছু কাগজপত্র আমার নামে ট্রান্সফার করতে হবে বলে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। এমনকি আমার অজ্ঞাতসারে আমার স্বাক্ষর জাল করে বিও অ্যাকাউন্ট ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলে শেয়ার বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

জানতে চাইলে ফার্স্ট ক্যাপিটালের সিইও কাউসার আল মামুন বলেন, বিও অ্যাকাউন্টের কাগজপত্রে দেওয়া মোবাইল নম্বরে ডায়াল করে ইয়াসমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। বরং সেখানে তার বোনের মোবাইল নম্বর দেওয়া ছিল। এদিকে ইয়াসমিন দাবি করা যিনি আমার অফিসে এসেছিলেন। তিনি বিও অ্যাকাউন্টে দেওয়া নমিনির নাম বলতে পারেননি। তাছাড়া, বিও অ্যাকাউন্টের নথিতে দেওয়া ইমেল অ্যাড্রেস ইয়াসমিনের নয়। সেখানে একজন পুরুষের নাম ছিল। এটি আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছে।
তাছাড়া হঠাৎ করে এত বড় অঙ্কের লেনদেন হচ্ছে যেখানে কাগজপত্রে ঝামেলা আছে, তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো তার দায়িত্ব উল্লেখ করে মামুন বলেন, ‘তার সব টাকা তারা অ্যাকাউন্টেই আছে।
কাউসার আল মামুন বলেন, আমার বিরুদ্ধে বিএসইসিতে একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। তবে অভিযোগকারী উম্মে হাবিবা জানিয়েছেন তিনি অভিযোগ করেননি। তাঁর নাম ব্যবহার করে মাস্টার ফিডের এমডি কবির হোসেন এ অভিযোগ দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, উম্মে হাবিবার পাসপোর্ট, নিকাহনামা দেখে আমি তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হয়েছি। উম্মে হাবিবার আগের স্বামী ছিলেন মোকাদ্দেম হোসাইন। তাদের তালাকের কাগজপত্র আমরা হাতে পেয়েছি। পরবর্তীতে তিনিই মৃত রফিকুল ইসলামকে বিয়ে করেন। উম্মে হাবিবাই রফিকুল ইসলামের শেয়ারের উত্তরাধিকারী। এখন আমার দায়িত্ব হচ্ছে, প্রকৃত মালিককে শেয়ার বুঝিয়ে দেওয়া।

জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, সম্প্রতি মাস্টার ফিডের শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে পৃথক তিনটি চিঠি আসছে। এসব চিঠিতে একজন আরেক জনকে অভিযুক্ত করছেন। যেহেতু পুঁজিবাজার অতি সংবেদনশীল একটি খাত, তাই কমিশন গুরুত্বের সঙ্গে সকল তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখছে। কমিশনের তদন্তে যে বা যারাই দোষী হবেন তাদেরকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনবেন।

উম্মে হাবিবার অভিযোগে বলা হয়েছে, আমার স্বামী মৃত রফিকুল ইসলাম গত বছরের (২০২২ সাল) ১৫ জুলাই মৃত্যু বরণ করেন। তিনি মাস্টার ফিডের পরিচালক ছিলেন। তাঁর কাছে কোম্পানির ৭০ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার ছিল, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৯ কোটি টাকা। আমার স্বামীর মৃত্যুর পর আমি স্বাভাবিকভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। এমন অবস্থায় মাস্টার ফিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কবির হোসেন ও আমার দেবর মো. তৌহিদুল আলম আমার মৃত স্বামীর কোম্পানীর কিছু কাগজপত্র আমার নামে ট্রান্সফার করতে হবে বলে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। আমি সরল বিশ্বাসে কাগজপত্রাদিতে স্বাক্ষর করে দেই। স্বাক্ষরকৃত কাগজপত্রাদি দিয়ে মো. কবির হোসেন গং ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজে একটি বিও অ্যাকাউন্ট খোলে। গত ১৬ জুলাই কবির হোসেনের সাথে ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের মতিঝিল অফিসে গিয়ে জানতে পারি যে, আমার নামে একটি বিও এ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। তখন আমি বুঝতে পারি আমার দেবর ও কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক যখন আমাকে দিয়ে মাস্টার এগ্রোটেকের অন্যান্য কাগজপত্রাদি স্বাক্ষর করিয়েছে ঠিক তখনই এই বিও হিসাবের কাগজপত্রাদিও আমাকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছিল। বিও হিসাব নং: ১২০৪৪৩০০৭৫৮৭৪৯৪৯।

অভিযোগে উম্মে হাবিবা বলেন, পত্রিকা পড়ে জানতে পারি, আমার মৃত স্বামী রফিকুল আলমের নামে বরাদ্দকৃত আনুমানিক নয় কোটি টাকার শেয়ার আত্মসাতের ষড়যন্ত্র চলছে। আমি জানতে পারি যে, বিও হিসাব খোলার পূর্বে তারা আমার স্বাক্ষর জাল করে সাউথইস্ট ব্যাংকের মালিবাগ শাখায় একটি ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলে। পরবর্তীতে বিও এ্যাকাউন্ট ওপেন করার পর উক্ত বিও তে ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৫০০টি শেয়ার ট্রান্সফার করে। শেয়ার বিক্রি করে তারা ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা সাউথ ইস্ট ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে যায়, যা সম্পূর্ণভাবে আমার অজানা ছিল। এখানে উল্লেখ্য যে, আমার বিও এ্যাকাউন্টের পাওয়ার অব এ্যাটর্নী হিসেবে মো. আবুল বাশার এবং নমিনী হিসেবে পেয়ার উদ্দিনকে দেখানো হয়েছে, তাদের কাউকেই আমি চিনিনা। বর্তমানে আমার বিও হিসাবে শেয়ার এবং ব্যালেন্স সহ মোট প্রায় ১ কোটি টাকা আছে।
চিঠিতে প্রাপ্য টাকা পুনরুদ্ধারের জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ফার্স্ট ক্যাপিটালের সিইওর কাছে আবেদন করেছেন উম্মে হাবিবা।

এর আগে উম্মে হাবিবার বিরুদ্ধে বিএসইসিতে অভিযোগ দিয়েছিলেন ফার্স্ট ক্যাপিটালের সিইও কাউসার আল মামুন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, মাস্টার ফিডের এমডি একজন নারী ও কয়েকজন লোকসহ অফিসে আসেন। মুখমন্ডল ঢাকা ওই মহিলাকে উম্মে হাবিবা দাবি করেন কবির হোসেন। বিও হিসাবে দেওয়া তাঁর (উম্মে হাবিবা) পেশা ও ঠিকানা জাতীয় পরিচয় পত্রের সাথে মিল নেই। এছাড়াও ফার্স্ট ক্যাপিটালে দাখিলকৃত হাবিবার পাসপোর্টে তার স্বামীর নাম মো. মোকাদ্দেম হোসাইন উল্লেখ রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে গতকাল রোববার মাস্টার ফিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কবির হোসেন বলেন, যে কেউ অভিযোগ করতে পারে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণই মিথ্যা ও বানোয়াট।

চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles