Wednesday, December 4, 2024
spot_img
spot_imgspot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

শীতের পিঠায় ঐতিহ্যের টান

ডেইলি শেয়ারবাজার ডেস্ক: শীত এলেই বাড়িতে বাড়িতে পিঠা তৈরির হিড়িক পড়ে যায়। চালের গুঁড়া, খেজুর রস আর হরেক রকমের উপকরণে পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করেন মা-বোনেরা। বাড়ি থেকে দূরে থাকায় সে আমেজ হয়তো পাওয়া হয় না ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের পিঠার স্বাদ দিতে ক্যাম্পাসের প্রতিটি মোড়ে বসেছে শীতের পিঠার দোকান। বলছিলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা।

শীত আর পিঠাপুলি যেন একটি আরেকটির পরিপূরক। নানান স্বাদের পিঠা ছাড়া শীত যেন জমেই না। জাবি এদিক থেকে স্বতন্ত্র। হেমন্তের আগমণের সঙ্গে শীতের কুয়াশা জেঁকে বসেছে অনেক আগেই। রাত পড়লেই ঠাণ্ডা হাওয়া টের পাওয়া যায়।

জাবি যেন শীতের নগরী। রাজধানী ঢাকা থেকে আপন বৈশিষ্ট্যে সে অনন্য। দিনের সোনালী সূর্য অস্ত যেতেই ক্যাম্পাস মায়াবী আবহ ধারণ করে। আর শীতকে উপভোগ করতে ক্যাম্পাসে চলছে নানা আয়োজন।

বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা গড়াতেই এখানে পিঠা তৈরির দোকানগুলোতে ভিড় জমান শিক্ষার্থীরা। মেতে ওঠেন গল্প-আড্ডা আর গানে। সন্ধ্যা নামতেই পিঠার দোকানগুলোতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অন্য ক্রেতাদেরও ভীড় বাড়তে থাকে। এসব দোকানে ক্রেতাদের মধ্যে স্মৃতির টানে ছুটে আসা সাবেক শিক্ষার্থী ও তার পরিবারের সদস্যরা আছেন।

পিঠার মৌ মৌ গন্ধ যেন ভরে আছে চারপাশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যস্ত অ্যাকাডেমিক জীবনে পিঠার এমন বাহারি আয়োজন যেন শিক্ষার্থীদের মনে এক চিলতে গ্রামে ফেরার আকুলতা তৈরি করে।

ছোট ছোট পিঠার দোকানগুলোতে পাওয়া যায় মাটির চুলায় বানানো ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, ডিম চিতই, মাংসের পিঠা, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা, তেলের পিঠা, জামাই পিঠা। শুধু মিষ্টি নয়, সঙ্গে বেশ কয়েক ধরনের মজাদার ঝালের পিঠাও আছে।

সংস্কৃতির রাজধানী খ্যাত জাবিতে আগে ‘পিঠা চত্বর’ থাকলেও এখন আর নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ডজনখানেক পিঠার অস্থায়ী দোকান গড়ে উঠেছে। পরিবহন চত্বর, মুরাদ চত্বর, ছবি চত্বর, অমর একুশের পাশে, টারজান পয়েন্ট, বটতলা, বঙ্গবন্ধু হল, আলবেরুনি হল, প্রীতিলতা ও শেখ হাসিনা হলের সামনে বসে পিঠার দোকানগুলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হলের সামনে পিঠা বিক্রি করেন দুই বোন সুমাইয়া ও সোহাগী। মায়ের বানানো পিঠার ডালি নিয়ে প্রতিদিন বিকেলে হাজির হয় তারা। তারা জানায়, অন্য কোথাও কাজ করার চেয়ে এখানে পিঠা বিক্রি করাই ভালো। তারা প্রতিদিন পিঠা বিক্রি করে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ইনকাম করে। এই আয় দিয়েই চলে তাদের সংসার। ক্যাম্পাসের ভাই-আপুরাও তাদের খুব পছন্দ করে।

সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ১৬টি ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, জাবি ক্যাম্পাসে প্রতিদিন প্রায় অর্ধলক্ষ টাকার পিঠা বিক্রি হয়। আর এসব দোকানগুলোর ওপর জীবিকা নির্বাহ করছেন প্রায় ১৫-২০টি পরিবার।

দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা পিস হিসাবে পিঠা বিক্রি করেন। যেমন- তেলে ভাজা, ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা প্রতিটি ১০ টাকা। আর মাংস পিঠা, পাটিসাপটা, নঁকশি পিঠা ২০ টাকা করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদুর শুভ বলেন, জাবির শীতকাল মানেই আপনার ভাবনার থেকে একটু বেশিকিছু। ভোরের ঘন কুয়াশা,অতিথি পাখি, রাত জাগা কনসার্ট- কি নেই এখানে! শীতের পিঠা যেন এ ক্যাম্পাসের অনন্য একটা যায়গা জুড়ে আছে। খুব ভোরে চাদর গায়ে সাইকেল নিয়ে পিঠা খেতে যাওয়ার ব্যাপারটা সত্যিই তুলনাহীন। বন্ধুদের সঙ্গে সন্ধ্যার আড্ডায়, এমনকি গভীর রাতেও আপনার মুখে হাসি ফুটাবে এই পিঠা। চাইলে যে কেউ আসতে পারেন, অতিথি পাখি দেখার সঙ্গে সঙ্গে পিঠা খেতে মন্দ লাগবে না কখনোই।

 

ডেইলি শেয়ারবাজার ডটকম/এম আর.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles