Home / অর্থনীতি / ফের অন্তর্দ্বন্দ্বে বিএসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংক

ফের অন্তর্দ্বন্দ্বে বিএসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংক

ডেইলি শেয়ারবাজার রিপোর্ট: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের ওয়ান ব্যাংককে ঘিরে ফের অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি ব্যাংকটির আর্থিক প্রতিবেদন পরিবর্তনের নির্দেশ দিলে এর সরাসরি বিরোধিতা করে বিএসইসি।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ওয়ান ব্যাংক বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজন ও লভ্যাংশ বিতরণের পরে তাদের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন পরিবর্তনের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকটি বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে কোনো পরিবর্তন আনেনি। এ কারণে ওয়ান ব্যাংককে জরিমানা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্যদিকে সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর বিএসইসি প্রকৃত আর্থিক তথ্য প্রকাশের নির্দেশ দেয়। এ রকম সিদ্ধান্ত শুরুতেই দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে দুই সংস্থার সম্পর্ক আর স্বাভাবিক হয়নি।

বিএসইসি এক চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুই বিভাগের কর্মকর্তাদের দিকে আঙুল তোলে। বিএসইসির ওই চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের উদ্দেশে বলা হয়, ওয়ান ব্যাংকে পাঠানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-১ ও অফ সাইট সুপারভিশন বিভাগের দুটি চিঠির বিষয়ে কমিশন অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। কারণ, চিঠি দুটি মূল্য সংবেদনশীল তথ্য সংক্রান্ত। সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই দুই বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরাও সুবিধাভোগী বলে বিবেচিত।

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে লভ্যাংশের পরিমাণ নির্ধারণ আইনসংগত নয়। লভ্যাংশের পরিমাণ নির্ধারণ করা শেয়ারহোল্ডারদের মৌলিক অধিকার। চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত স্থগিতের জন্য গভর্নরের হস্তক্ষেপ চায় বিএসইসি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাতে সাড়া দেয়নি।

দুই সংস্থার সম্পর্ক নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এখন শেয়ারবাজারে সূচক বাড়লে বিএসইসি খুশি হয়, সূচক আরও রেকর্ড করা পর্যন্ত মার্জিন লোন বা ঋণসীমা বহাল রাখে। এতে আবার বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্বিগ্ন হয় এবং শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের ওপর তদারকি বাড়ায়। ব্যাংকগুলো নিয়ম ভাঙলে সতর্ক ও জরিমানা করে।

এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী, ‘২০১০ সালের ধসের আগেও একই অবস্থা তৈরি হয়েছিল, যার সুরাহা এখনো হয়নি। এবার দুই সংস্থার দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এর ফলে শেয়ারবাজার ঘিরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। যেটা খুব দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক। এ জন্য সরকার দুই সংস্থাকে পরামর্শ দিতে পারে, তবে তা যেন প্রকাশ না হয়।

উল্লেখ্য, ওয়ান ব্যাংকের ২০২০ সালের কার্যক্রমের ওপর চলতি বছরের শুরুর দিকে পরিদর্শন শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-১। এতে ব্যাংকটির ঋণের বিপরীতে যথাযথ মানে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ করা হয়নি বলে ধরা পড়ে। সে অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ১০ মার্চ এক চিঠিতে ওয়ান ব্যাংককে জানায়, তারা প্রভিশন সংরক্ষণ করেছে ১ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। কিন্তু সংরক্ষণ করতে হবে ১ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। ঘাটতি রয়েছে ৮৭ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাই ব্যাংকটিকে পরের বছরে ৮০ কোটি টাকা এবং ২০২০ সালের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার আগে বাকি ৭ কোটি টাকা সংরক্ষণের নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি সুদ আয় থেকে ৮ কোটি টাকা কেটে স্থগিত সুদ হিসাবে নিয়ে ২০২০ সালের হিসাব চূড়ান্ত করতে বলে। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণার যে নিয়ম চালু করা হয়েছে, তা মেনে চলতেও ওয়ান ব্যাংককে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠি পাওয়ার আড়াই সপ্তাহ পরে গত ২৮ মার্চ ওয়ান ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারধারীদের জন্য সাড়ে ১১ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর মধ্যে ৬ শতাংশ নগদ ও সাড়ে ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১২ এপ্রিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক আবার এক চিঠিতে ওয়ান ব্যাংককে জানায়, প্রস্তাবিত লভ্যাংশ ওয়ান ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত না মেনে পর্ষদের সিদ্ধান্তকেই ‘মূল্য সংবেদনশীল তথ্য’ হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে ব্যাংকটি।

এরপর ওয়ান ব্যাংক গত ২৪ জুন বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজনের পর লভ্যাংশ বিতরণ করে। এরপরে তাদের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন পরিবর্তনের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকটি বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে কোনো পরিবর্তন আনেনি। এ কারণে ওয়ান ব্যাংককে জরিমানা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

 

ডেইলি শেয়ারবাজার ডটকম/নি.

Check Also

ইসলামী ব্যাংকের ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম উদ্বোধন

ডেইলি শেয়ারবাজার ডেস্ক: ইসলামী ব্যাংক ট্রেনিং অ‌্যান্ড রিসার্চ একাডেমি (আইবিটিআরএ) আয়োজিত ১৫৮তম ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম ২২ এপ্রিল ২০২৪, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *