Home / সম্পাদকীয় / বাজার গতিশীল করতে ফ্লোর প্রাইসের নতুন পদ্ধতি আনা উচিত

বাজার গতিশীল করতে ফ্লোর প্রাইসের নতুন পদ্ধতি আনা উচিত

ফ্লোর প্রাইস কি- সেটা বাংলাদেশের  শেয়ার বাজারে যারা বিনিয়োগ করেন তারা অলরেডি প্রায় সবাই জেনে গেছেন।সহজ কথায় বলতে গেলে শেয়ার বাজারের যেকোন  কোম্পানির একটা সর্বনিন্ম দাম যেটা নির্ধারণ করে দেয়া হয়ছে যে তার নিচে নামতে পারবে না কিন্তু  উপরে উঠতে পারবে সেই সর্বনিন্ম দামই হল কোন কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস।। এই ফ্লোর প্রাইস এইবার দিয়ে দ্বিতীয় বার সেট করা হয়েছে।

প্রথম বার যখন করোনা মহামারীর ঢেউ শুরু  হয়েছিল এবং বাজার ব্যাপক ধস শুরু  হওয়ায় তখন বাজার কে আরও ভয়াবহ  পতনের হাত থেকে বাজার কে রক্ষা করতেই BSEC থেকে  এটা সেট করা হয়েছিল যা প্রথমে সমালোচিত হলেও পরবর্তীকালে সেটা দারুণ কার্যকরী সিদ্ধান্ত হিসেবে সকলের কাছে প্রসংসিত হয়েছিল। BSEC এই সিদ্ধান্তটি অবশ্য বেশ কিছু পর শেয়ার বাজার ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ায় পর্যায়ক্রমে সেটি তুলে নেয়া হয়েছিল।

লক্ষনীয় বিষয় হল, শ্রীলংকা পরিস্থিতি দেশের  জ্বালানি পরিস্থিতি ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ডলার ক্রাইসিস মত পরিস্থিতি তৈরী হওয়ায় আবার  বাজার ব্যাপক পতনে চলে যাওয়ায়  বিনিয়োগকারীদের বাচাতে পুনরায় বাজারে দ্বিতীয় বারের মত ফ্লোর প্রাইস সেট করা হয় এবং নতুন গভর্নর কর্তৃক শেয়ার বাজারের জন্য  অনেক ইনোসিটিভ প্রদান করা এবং যথেষ্ট সহযোগীতা এবং BSEC এর ইতিহাসে প্রথম এত  ব্যাপক ভাবে নিবেদিত প্রান হিসেবে এবং  বরাবারের মত শেয়ার বাজারকে  রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার আলো বাধতে শুরু  হয়।

কিন্তু গত ফ্লোর প্রাইসের সফলতা এবার প্রথম প্রথম  কিছুদিন সফল হলেও বর্তমানে সেটা বুমেরাং হয়ে পড়ে। বর্তমানে এটা গলার কাটা বা উভয় সংকট হয়ে পড়ে। বিষয়টি এমন ভাবে বুমেরাং হয়ে যাচ্ছে এই বার দেশের নামকরা এবং ব্রান্ড কোম্পানির এবং  DSE নাম করা প্রতিষ্ঠিত এবং ভেরি ভেরি স্ট্রং ফান্ডামেন্টাল শেয়ার যেমন: GP,  Squarepharma,Batbc, Robi,Fortune এবং আরও অনেক fundamental শেয়ার দীর্ঘদিন ফ্লোর প্রাইসে আটকিয়ে আছে এবং হাতে গোনা সামান্য পরিমানে লেনদেন হয় এবং ফ্লোরে আটকিয়ে আছে। এরফলে সমস্যা হচ্ছে এই শেয়ার গুলো strong fundamental শেয়ার অথচ এই শেয়ার গুলোতে যারাই ইনভেষ্টমেন্টে যাচ্ছেন তারাই আটকিয়ে যাচ্ছেন এইভাবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ এমনকি সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও আটকিয়ে যাচ্ছেন।

এর ফলে শেয়ার বাজারে একটা মেসেজ তৈরী হচ্ছে যে ফ্লোরে ইনভেষ্টমেন্ট করলে fund আটকে যাবে যার ফলে কেউই ফ্লোর প্রাইসের শেয়ার কিনতে চাচ্ছে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে বড় বিনিয়োগকারী থেকে অনেক  প্রাতিষ্ঠানিক  বিনিয়োগকারীরা ফ্লোর প্রাইস না তোলা পযর্ন্ত ইনভেষ্টমেন্ট করতে সাহস পাচ্ছেনা। এটা যেমন বাজারের সংকট তেমনি   আমরা শেয়ার বাজারের অতীত ইতিহাসে বহুবার দেখেছি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা তারা বাজারের প্রতি সুবিচার করেনি বহুবার ইনভেষ্টমেন্ট এর কথা দিয়েও তারা বাজার কে সাপোর্ট দিতে এগিয়ে আসেনি বা নিজেদের লাভ কে বেশি গুরুত্ব দিয়ে তাদের কার্যকরী ভুমিকা পালন করেনি। সুতরাং তাদের কথা মত ফ্লোর তুলে শেয়ার বাজারে ধস ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত তারপর ফ্লোর তুলে নিলে বাজার আবার ব্যাপক প্যানিক হয়ে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিনিয়োগকারীরা আরও নিশ্বেস হয়ে যাবে। তাই এখন এই  পরিস্থিতি চলতে থাকলে আস্তে আস্তে লেনদেন একবারেই লোয়েষ্টে চলে আসবে এবং পুনরায় সকল শেয়ার ফ্লোরে চলে আসবে মানে গলার কাটা থেকেই যাবে।

তাই উভয় সংকট থেকে মুক্তি পাবার আমরা নতুন একটা পন্থা যা ফ্লোর প্রাইসের বিকল্প পদ্ধতি যাতে সাপ ও মরবে লাঠিও ভাঙাবেনা এমন সমাধান যোগ্য একটি বিকল্প আমরা চাই।

শেয়ার বাজারে যারা বিনিয়োগ করে সকলকেই লাভ চাই এবং কেউ সর্ট টাইম অল্প বা বেশি বা লং টাইমে বেশি এবং সবাই fund এর ব্যবহারের নিশ্চয়তা চাই। আর এই জন্যই একটা যাদুকরী প্রন্থা আমরা প্রকাশ করতে চাই যার ফলে যেমন fundamental শেয়ার গুলো ইনভেষ্টমেন্ট বাড়বে বিনিয়োগকারীরা লাভের আশায় বিনিয়োগ করবে বিনিয়োগে প্রতিযোগিতা শুরু  হবে এবং  লাভ ও পাবে এবং ফ্লোর প্রাইসেও অটোমেটিক ভেঙে যাবে এবং লেনদেন ও বেড়ে বাজারও স্বাভাবিক হয়ে যাবে। পদ্ধতি হল খুবই সহজ। সেটা হলো:

1 শুধুমাত্র  যেসকল কোম্পানির শেয়ারের PE রেশিও 40 এর নিচে সেসকল কোম্পানির শেয়ার যদি এক সপ্তাহের মধ্যে  লেনদেন হয়ে সপ্তাহের শেষ দিন বর্তমান চলমান ফ্লোর প্রাইসের উপরে close প্রাইস না হয় তবে সেই শেয়ারটি পরবর্তী সপ্তাহের প্রথম দিন 2% অতিরিক্ত দাম পূর্বের ফ্লোর প্রাইসের সাথে যোগ হয়ে  নতুন ভাবে সেটার ফ্লোর প্রাইস সেট হবে। ধরুন বর্তমান কোন শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস আছে 20 টাকা সেটা এক সপ্তাহের লেনদেন শেষে বৃহস্পতিবার শেয়ারটি পূর্বের ফ্লোরেই থাকল তবে শেয়ারটি পরবর্তী সপ্তাহে প্রথম দিন রবিবার নতুন ফ্লোর প্রাইস হিসেবে 2% অতিরিক্ত মানে 40 পয়সা যোগ হয়ে 20.40 দামে নতুন ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ হবে। এরফলে কি হবে যারা smart বা কৌশলী বিনিয়োগকারী যারা তারা ফ্লোরেই শেয়ার কিনতে শুরু  করে দিবেন এই আশায় যে কারন পরবর্তী সপ্তাহে শেয়ারটি তো অবধারিত 2% দাম বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন ফ্লোর হয়ে যাবে। বাড়তি দামে নতুনভাবে ফ্লোর সেট হবার পরও যদি  উক্ত শেয়ারটি আবারও যদি নতুন সেট করা ফ্লোর   সপ্তাহের শেষ দিনে একই অবস্থানে থাকে তবে পুনরায় শেয়ারটি একই ভাবে একই পদ্ধতিতে  নতুন ফ্লোর সেট হবে।। এভাবেই যতদিন শেয়ারটি PE রেশিও 40 নিচে থাকবে ততদিন একই ভাবে চলবে।। আর আমরা মনে করি সবাই লাভ চাই এবং লস ছাড়া তাই পদ্ধতিতে সবাই বিনিয়োগে ঝাপিয়ে পড়বে শেয়ার কিনার প্রতিযোগিতা শুরু  হবে বাজারে ঝুঁকিমুক্ত এবং আস্থার প্রতিফলন ঘটবে।। এবং বাজারে লেনদেন বৃদ্ধি এবং fundamental শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা এবং ঝোঁক বাড়বে এবং বাজার সুচক এর সাথে সাথে লেনদেন এবং বিনিয়োগ এর পরিমান বেড়ে যাবে এবং আস্তে আস্তে এই পদ্ধতির আর প্রয়োজনই পড়বে না তার মধোই বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।। সবাই একটা বিষয় জানে এবং মানে যেমন বুনো ওলে বাঘা তেতুল লাগে।।তেমনি আমাদের দেশের মত শেয়ার বাজারে এই রকম টনিক বা বাঘা তেতুল প্রয়োজন পড়ে। আমরা সাধারণ বিনিয়োগকারিরা দীর্ঘ 2010 সাল থেকেই দেখছি আমাদের বাজারে টনিক ছাড়া কোন কাজ হয়না। তাই  সকল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ দয়া করে সকলের স্বার্থে এই পদ্ধতি বিবেচনা করে যাচাই বাছাই করে। আমাদের শেয়ার বাজারে সেট করে বিনিয়োগকারীদের গলার কাটা থেকে উদ্ধার করবেন।
লেখক : মোহাম্মদ আব্দুল মতিন চয়ন
শেয়ার বাজার গবেষক এবং বিশ্লেষক।
ডেইলি শেয়ারবাজার ডটকম/নি.

Check Also

একদিন পতনে যে ক্ষতি হয় চার দিন বাড়লেও তা পোষায় না

নতুন আইপিও’র মাধ্যমে আসা কোম্পানির শেয়ার দর ফেসভ্যালুর নিচে নেমে যায়। অন্যদিকে কলকব্জা মেরুদন্ডহীন কোম্পানির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *