Sunday, March 23, 2025
spot_img
spot_imgspot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

হাসপাতাল জুড়ে কান্নার রোল

ডেইলি শেয়ারবাজার ডেস্ক: বিভীষিকাময় এক রাত! ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর থেকে আসতে থাকে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স। অ্যাম্বুলেন্স থেকে যাদের নামানো হচ্ছে তাদের অধিকাংশই লাশ। এর মধ্যে দুটি লাশ কঙ্কাল অবস্থায় পলিথিনে ভরে নিয়ে আসা হয়। কাভার্ড ভ্যান দিয়েও নিয়ে আসা হয় লাশ। কয়েক হাজার মানুষ সেখানে উপস্থিত হন। হাসপাতাল জুড়ে পড়ে কান্নার রোল। আগুনে পোড়া স্বজনের লাশ নিতে অপেক্ষারতদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তাদের আহাজারিতে হাসপাতাল এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। কেউ কেউ নিহত স্বজনের স্মৃতি মনে করে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন।

রাজধানীর বেইলী রোডে বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কেউ বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তান, বোন কিংবা নাতি-নাতনি হারিয়েছেন। তাদের খোঁজে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। তাদের আহাজারিতে উপস্থিত লোকজন অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে হতাহতদের চিকিৎসাসেবা দিতে রাতভর চিকিত্সক-নার্স ও কর্মচারীরা প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যান। ছুটে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি পুরো চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম মনিটরিং করেন। ঐ সময় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। স্বাস্থ্যমন্ত্রী গতকাল সকালে সাংবাদিকদের বলেন, অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের চিকিত্সাসেবার সব দায়িত্বভার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রহণ করেছেন।

হাসপাতাল দুটিতে কে কোন দায়িত্ব পালন করেছেন তার কোনো ঠিক ছিল না। অনেক ডাক্তার ও নার্সকে রোগীর ট্রলি টানতে দেখা গেছে। চিকিৎসকরা বলেন, অতীতে আমরা বড় বড় দুর্ঘনায় হতাহতদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কাজ করেছি। এখনো করছি। রোগীরা যদি আমার বাবা-মা সন্তান হতো, বাবা-মায়ের জন্য কিংবা সন্তানের জন্য যে দায়িত্ব পালন করতাম, এখনো তাই করছি। আমরা মহৎ পেশায় জড়িত। কী পেলাম, কী পেলাম না সেটা কখনোই দেখি না। তাই আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই দায়িত্ব পালন করছি।

এদিকে আগুনে নিহত এক নারী ও শিশুর লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পড়ে আছে। অগ্নিকাণ্ডের পরদিন শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত তাদের লাশের দাবি নিয়ে কেউ আসেনি। তবে তাদের চেহারা একইরকম। তারা মা-মেয়ে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশেই অস্থায়ী তথ্য ও সেবাকেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে স্বজনরা পূর্ণ ঠিকানাসহ অন্যান্য কাগজপত্র জমা দিয়ে লাশ বুঝে নেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ করছেন। বৃহস্পতিবার রাতেই কয়েক জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ৪০ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে নিহত ৪৬ জনের মধ্যে ছয় জনকে আর চেনার উপায় নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেন, কেউ দাবি করলে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত হলে তাদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ছয় জনের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. রায়হানা আউয়াল খবর পেয়ে রাতেই হাসপাতালে চলে আসেন। আগুনের খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে একজনের লাশ রয়েছে। আগুনের পেছনে নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থা অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাচ্ছে। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন গতকাল সকালে হাসপাতালে যান। তিনি সেখানে নিহতদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঐ ভবনের নিরাপত্তাজনিত কোনো ধরনের গাফিলতি কিংবা অবহেলা হয়েছে কি না, সেটা আমরা তদন্ত করে দেখব। শীর্ষ কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার তদন্তভার র্যাবকে দিলে তা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করা হবে।

সকালে ঘটনাস্থলে যান ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হবে। কোনো ধরনের কিছু হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিআইডির প্রধান হিসেবে অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া হাসপাতালে যান। তিনি বলেন, সিআইডি নমুনা সংগ্রহ করছে। এরপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি নিহতদের স্বজনদের সমবেদনা জ্ঞাপন করে বলেন, এই মৃত্যু কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। কারো কোনো গাফিলতি থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

ডেইলি শেয়ারবাজার ডটকম/এম আর.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles