ডেইলি শেয়ারবাজার রিপোর্ট: সম্প্রতি বেশ নেতিবাচক আচরণ করছে দেশের পুঁজিবাজার। সপ্তাহের এক-দু’দিন ভালো থাকলেও বেশিরভাগ সময়ই দরপতনের চিত্র চোখের পড়ার মতো। এতে গেল কয়েকমাসে যে ক্ষতি পুষিয়ে কিছুটা মুনাফার আশা বিনিয়োগকারীরা দেখেছিলেন বর্তমানে তার সবই ভেস্তে যাচ্ছে। তবে বেশকিছু ইস্যুতে বর্তমান পুঁজিবাজার টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজার। কিন্তু নীতি নির্ধারণী মহলের শীর্ষস্থান থেকে একটু বেশি মার্কেট নিয়ে কথা বলায় কমিশনের ওপর থেকে আস্থা অনেকটা কমে এসেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সুকুক বন্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈরি আচরণের গুজব প্রকাশ হওয়ায়। মার্কেটে বিএসইসির চেয়ারম্যানের যে কারণে পদত্যাগ গুজবটি ছড়িয়েছিল তাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অনেকটা কমিয়ে দেয়। অন্যদিকে পুঁজিবাজার এক্সপোজার ইস্যুতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির প্রতিনিধিদের দুই রকম কথা প্রচার হওয়ায় সেই আস্থায় সম্পূর্ণ চিড় ধরে। যার খেসারত বর্তমান মার্কেটকে দিতে হচ্ছে।
তবে সাম্প্রতিক দর কমার তিনটি কারণ বলে মনে করেন শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন, প্রথমত, বছর শেষে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেওয়া; দ্বিতীয়ত, মার্জিন ঋণ সমন্বয়ের জন্য নতুন করে তহবিল ছাড় হ্রাস পাওয়া এবং তৃতীয়ত, কয়েকটি আইপিও আসা। তিনি আশা করছেন, আগামী কিছুদিনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।
এদিকে বর্তমান শেয়ারবাজার নিয়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী মনে করেন, বাজার এখন ঠিক নেই। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যেভাবে শেয়ার দর ও সূচক বেড়েছে, তার যৌক্তিক কোনো কারণই ছিল না। কৃত্রিমভাবে বাড়ানো শেয়ারদর টেকসই হয় না।
তিনি বলেন, কখনও দায়িত্বশীল সংস্থা থেকে ব্যাংককে বিনিয়োগ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কখনও বলা হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগে ক্রয়মূল্যে এক্সপোজার হিসাব করতে; কখনও অর্থ মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হচ্ছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হবে বলে প্রচার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, শেয়ারবাজারের ভবিষ্যৎ ভালো। দায়িত্বশীলরা আগ বাড়িয়ে কথা বলায় বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হয়েছিলেন। এসব যদি বাদ দেন, তাহলে এই দরপতনের আগে যে শেয়ারদর বেড়েছিল, তার যৌক্তিক কি কোনো কারণ ছিল?
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, যখনই বাজারকে কৃত্রিমভাবে বাড়তে দেওয়া হয়, তখনই কারসাজি জেঁকে বসে। গত দেড় বছরের শেয়ারবাজারের উত্থানে ভালো শেয়ারের দর তুলনামূলক কম বেড়েছে। কারণ দামি ও বড় শেয়ারের দর বাড়ানো সহজ ব্যাপার না। তাই খারাপ শেয়ারের দাম বেড়েছে বহু গুণ। এটা যে কারসাজির মাধ্যমে হচ্ছে, তা স্পষ্ট। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা হয়তো গুরুত্ব দিচ্ছে না।
বিএসইসির সাবেক এ চেয়ারম্যান আরও বলেন, বলা হয়, কারসাজি ধরার জন্য ‘স্টেট অব দ্য আর্ট’ টেকনোলজির সফটওয়্যার আছে। তাহলে ওটা দিয়ে কী করা হচ্ছে? বিএসইসির উচিত ওই সফটওয়্যার দেখে কারা কারসাজি করছে, কোন ব্রোকারেজ হাউস থেকে কারসাজি করছে, তাদের খুঁজে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। তা না হলে এ ধরনের ঘটনা বাড়তেই থাকবে এবং বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারাতেই থাকবেন। তাই সূচক বা লেনদেন কোথায় গেল, তা না দেখে সবাই আইন মেনে শেয়ার কেনাবেচা করছে কিনা, তা নিশ্চিত করতে কমিশনকে সর্বশক্তি নিয়োগের পরামর্শ দেন তিনি।
ডেইলি শেয়ারবাজার ডটকম/নি.