ডেইলি শেয়ারবাজার ডেস্ক: অসহনীয় গরমে রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষ অস্থির। চলমান এই তাপদাহে বেশি প্রভাব পড়ছে শিশুদের ওপর। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বহির্বিভাগে সেবা নেওয়াদের ৯০ শতাংশই জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত।
রোগের ধরন ও তীব্রতা অনুসারে অনেকেই ভর্তি হচ্ছে। রোগীর সংখ্যা বাড়ায় এক শয্যায় দু’জনকে রেখে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা। অনেক শিশুর জায়গা হয়েছে ওয়ার্ডের ভেতরে মেঝেতে। এমনকি হাসপাতালের বারান্দায় বিছানা পেতে সেবা দেওয়া হচ্ছে।
গতকাল বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে একাধিক চিকিৎসক-নার্স, রোগী ও অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, তীব্র গরমের কারণে জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়ে শিশুরা হাসপাতালে আসছে। ঈদের পর রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
দুপুর ১২টায় শিশু বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, তিন বছর বয়সী সাফা কবিরকে কোলে নিয়ে টিকিট কেটে দাঁড়িয়ে আছেন মা ফাতেমা খাতুন। তারা এসেছেন কামরাঙ্গীরচর থেকে। এক সপ্তাহ ধরে শিশুটির জ্বর। তিন দিন আগে তাকে চিকিৎসকের কাছে আনা হয়। তখন ডেঙ্গুসহ বেশ কিছু পরীক্ষা দেওয়া হয়েছিল। সাফার মা বলেন, ‘আজ (বুধবার) রিপোর্ট পেয়েছি, তাই চিকিৎসককে দেখাতে এসেছি। লাইনে দাঁড়িয়ে আছি এক ঘণ্টা হলো। কখন ডাক্তার দেখাতে পারব জানি না।’
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বংশালের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন তাঁর চার বছর বয়সী সন্তান সজীব আহমেদকে নিয়ে বহির্বিভাগে আসেন। তিনি বলেন, ‘চার দিন ধরে জ্বরে ভুগছে সজীব। এত সাবধানে রাখার পরও জ্বর হইল, এই গরমে বাচ্চারে নিয়া হাসপাতালে আসা খুবই কষ্টের।
শিশু বহির্বিভাগে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা জানান, বহির্বিভাগে সেবা নেওয়া ৯০ শতাংশই ভাইরাসজনিত জ্বর ও সর্দিতে আক্রান্ত। সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সেবা নিয়েছে ২৮৪ জন। তাদের মধ্যে ২৬৬ জন শিশু।
তিনি আরও জানান, গত মঙ্গলবার সেবা নিয়েছে ৩৬৫ শিশু, সোমবার এ সংখ্যা ছিল ২০৮ এবং রোববার ছিল ১৮৫। এসব রোগীর একটি বড় অংশকে ভর্তি রেখে সেবা দেওয়া প্রয়োজন। তবে শয্যা সংকটে অনেককে ভর্তি রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
ঢাকা মেডিকেলে শিশুদের তিনটি ওয়ার্ডের একটির নম্বর ২০৭। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডের ভেতর দুই সারি শয্যা। একটিও খালি নেই। দুই শিশুকে রাখা হচ্ছে এক শয্যায়। শয্যাগুলো ঘেঁষে মেঝেতে পাটি বিছিয়ে করা হয়েছে আরও এক সারি। তাতে শুয়ে আছে শিশু রোগীরা। মেঝেতে রোগীর ভিড়ে হাঁটাই দায়!
এই ওয়ার্ডে অনেক শিশুর মতো মেঝেতে ঠাঁই হয়েছে মো. মিজানুরের। সেখানে ফ্যানও নেই, ভ্যাপসা গরম। তার বাবা আশরাফুল ইসলাম বলেন, জায়গা না পেয়ে মেঝেতেই ছেলের চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। চিকিৎসক বলছেন, আরও কিছুদিন থাকতে হবে।
হাসপাতালের বাকি দুটি শিশু ওয়ার্ড ২০৮ ও ২১০ ঘুরেও একই চিত্র মেলে। মোট তিনটি ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে ৫২টি। ভর্তি আছে তিন গুণের বেশি, ১৫৩ শিশু। তাদের মধ্যে জ্বর-সর্দি নিয়ে ভর্তি হয়েছে ১২৪ জন।
রাজধানীর আশপাশের জেলার হাসপাতাল থেকে গুরুতর রোগীদের ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। যে কারণে সবসময় এখানে রোগীর চাপ থাকে। ঈদের পর থেকে এক শয্যার অধীনে দু’জন করে রোগী ভর্তি রাখা হচ্ছে। রোগীর সংখ্যা আরও বাড়ার শঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. লুৎফন নেছা বলেন, ঈদের পর রোগীর চাপ বেড়েছে। শিশুরা জ্বর-সর্দি নিয়ে হাসপাতালে বেশি আসছে। রোগী বাড়লে এক শয্যার অধীনে পাঁচজনকে রেখে সেবা দেওয়া হয়।
শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. দেলোয়ার হোসেন বলেন, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ঋতু পরিবর্তনের কারণে শিশুরা ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। এক পরিবারে একাধিক ব্যক্তি এ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। বহির্বিভাগে রোগীর চাপ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে হবে।
তিনি বলেন, আবহাওয়ার আকস্মিক পরিবর্তন, বাইরের প্রচণ্ড গরমে কাজ করা, হঠাৎ খুব ঠান্ডা পানি পান করলে ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। তাই গরম এড়িয়ে তরল খাবার গ্রহণ করা, প্রয়োজন ছাড়া বাসার বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন এই বিশেষজ্ঞ।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, চলমান এই ফ্লুর মৌসুমে যদি জ্বর, সর্দি-কাশির মতো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ ছাড়াও হাত ধোয়া, মাস্ক পরা এবং কাশি দেওয়ার শিষ্টাচার সারাবছর মেনে চললে আমরা শুধু ইনফ্লুয়েঞ্জা বা শ্বাসতন্ত্রের অসুখ নয়, অন্যান্য সংক্রামক রোগও প্রতিরোধ করতে পারব।
ডেইলি শেয়ারবাজার ডটকম/এম আর.